এই শ্রাবণে
মাহমুদ আল জামান
বিনাশের শব্দগুলো এখন ভাঙছে
খেলা করছে
কুলুপ লাগিয়ে ঠোঁটে মাদারীর খেল দেখছি নাগরিক ঔদাস্যে
মনুষ্যত্বহীনতায় বন্ধ হয়ে যায় সকল দরোজা
আমি আর খুঁজে পাই না বাল্যকালের
নির্মল সহজ ভাষা : পাখি সব করে রব
শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী আর মাহমুদুল হকের
শহর হয়ে পড়ে
বিবর্ণ ধ্বংসস্তূপের ছায়াচ্ছন্ন এক নগরী
নারীরা সব প্রেমহীনতায় ক্লান্ত
এই শহর একদা আমার ছিল
কলরব আর মিছিলের ধ্বনিগুলো স্কন্ধে নিয়ে
ধুলোমাটি হয়ে উঠেছিল পবিত্র
স্বাধীনতার বজ্রকণ্ঠ ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গন
উঠে এসেছিল স্নেহময় শরীরে।
দাবদাহে ছিল কখনো অগ্নিকু-
শৈশবের ছন্নছাড়া জীবনে একটি লাল ঘোড়া
পূর্ণতা এনে দিয়েছিল।
শামসুর রাহমান এই শহরের স্পন্দমান দুপুরে
জনারণ্যে কামানের গর্জন শুনেছিল
আমি এখন খনন করছি
পিতৃপুরুষের অহংকার।
ফুল ফোটে আর ফুল ঝরে পড়ে
পাখি ডাকে অলিন্দ্যে
সবুজের উদ্গম নিঃশব্দে
স্তব্ধতা মেখে এই শ্রাবণ জেগে থাকে।
বলির বাজনার মতো সাইরেন বাজিয়ে
যখন অ্যাম্বুলেন্স যায়
অ্যাম্বুলেন্স আসে
দেখেছি মায়াবী শিল্পীর চোখ
পা-ুর ললাট, বুক হাঁপরের মতো উঠছে নামছে
সে কি ফিরবে? সে কি ফেরার গান গাইবে
আবার মধ্যরাতে?
সে কি ম্লান অন্ধকারে
নদীর ছলছল শব্দে জেগে উঠবে?
সে কি রণক্লান্ত যুবকের অলীক স্বপ্নে
মায়াময় নারীর আকাক্সক্ষায়
ফের যুদ্ধে যাবে?
কোভিডকাল
মোহাম্মদ হোসাইন
এখন কফিও নেই, আড্ডাও নেই
এখন মগ, কফি, টেবিল আর আড্ডার
ঘ্রাণ থরেথরে রাখা। পেছন থেকে বেড়াল
ডেকে ওঠে, কেঁপে ওঠে ছায়া। জানলা
গলিয়ে আসে রোদের পালক, আশা
আমি গরম ভাতের ফেনা
বর্ষার বৃষ্টি মাখিয়ে খাই
পুঁইলতা, দারকিনি মাছের ঝোল
নিয়ে ভাবি, আর কি হবে না দেখা
কোনোকালে, অন্য কোনো সন্ধ্যায়!
এখনও
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
বৃষ্টিতে আমার কোনো সন্দেহ নেই
এখনও চকচকে বিশুদ্ধ বৃষ্টি।
ঝড়েও আমার কোনো দ্বিধামত নেই
ঝড় এলে পালাই - ঘরের দরজা জানলা
বন্ধ করে দিই।
শুদ্ধতা নিয়ে বজ্রপাতকেও
আমি কোনো দিন কোনো প্রশ্ন তুলিনি।
সর্বনাশও সত্যিই খুব সুন্দর আর বিশুদ্ধ!
এই কান্নার চোখের জল -
এখনও।
আন্তঃসম্পর্ক
রাজা হাসান
বৃষ্টিভেজা গন্ধরাজ গাছটি সম্পর্কে আমার কিছু বলার আছে।
সে সাদা ফুলের উদ্ভাস নিয়ে বৃষ্টিতে নিশ্চুপ ভিজে যায়।
তার এই নিরিবিলি, তার এই উদ্ভাস
পরিত্যক্ত উঠোনের পাশে যেন বিনীত নিবেদন।
ঐ গন্ধরাজ গাছের চৈতন্যপ্রবাহে দিগন্তের ছবি, উদাসীনতা
আর ঝরে পড়া...
কে কাকে অস্বীকার করে? নমিত সন্ধ্যা হয়তো কিছু জানে।
গানের খাতায় লেখা স্বরলিপি অনাবিষ্কৃত থেকে যায়...
তারপর এক সন্ধ্যায় গন্ধরাজ গাছটির গায়ে
হেলান দিয়ে রাখা সাইকেল ডানা মেলে
কোথায় যেন উড়ে যায়...
জল
পরিতোষ হালদার
শোনো রাত, আলো-অন্ধকার, বাতাস ও দীর্ঘশ্বাস।
শোনো রাজহাঁস, ঝাউ আর অনন্ত শস্যম-লী-
বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি পড়ে, ফুলের মতো জল;
মেয়েরা জল ধরে, ছল ধরে; ঝমঝম করে হাঁটে।
ও কন্যা- তোমরা কোথায় যাও...
ভেজা শব্দ আসে-
বর্ষা চিনি, ফুলও চিনি জলও ছলাৎ-ছল।
শোনো আকাশ, নদী ও বলেশ্বর, বাউল ও ঘুঘুপাতা।
শোনো পুরুষ তোমার নামে একটি পাখি পুষি-এই নাও সুয়াচাঁন।
দেখ-জল তোমার প্রতীক্ষায়।
জল খুলে দাও পুরুষ-পুরুষ, জলেরই নাম নারী,
জলের বুকে অজস্র নাম, জলাঙ্গ সঞ্চারী।
শোনো রোদ, রূপ ও রাশকল্প; শোনো শোনো শ্রাবণধারা-
এক জল, দুই জল, তিন জল ধান
ধানের বুকে জলের স্নান;
শতরূপা, স্নানের নাম
আমার গ্রাম জলের গ্রাম।
জলের গ্রাম...
জলের গ্রাম...
এমন শ্রাবণদিনে
মহীবুল আজিজ
এমন শ্রাবণদিনে শুরু হয়েছিল যুদ্ধ,
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বসে ঝড়ের খেয়ায়।
বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল কিন্তু যুদ্ধ থামে নাই,
আজ এই বৃষ্টিদিনে তুমি-আমি অবরুদ্ধ।
পনেরোশ’ একুশের সমস্ত শ্রাবণ মাস,
মেক্সিকোয় ছুটতে থাকে গুটিবসন্ত-ভাইরাস।
ঈশ^র চান, না চান রাজা-প্রজা দুইই মরে-
মরে রাস্তাঘাটে, মরে ঘরের ভেতরে।
প্লেগের অদৃশ্য দাঁত নামলো আরেক বর্ষায়,
ওরানে মরেছে লোকে, বৃষ্টি পড়েছে বাংলায়।
বর্ষণে-বর্ষণে কেটে গেছে পঞ্চাশ বছর,
পৃথিবী জানে নি তবু সেই মৃত্যুর খবর।
আবারও ঘনায় মেঘ এক শ্রাবণ-আকাশে,
তামাম দুনিয়া কাঁপে ভাইরাসের সন্ত্রাসে।
করোনাদিনের মেঘে ঝরে বৃষ্টি অকাতরে,
মন তবু বলে যায়, থাকবো না আর ভেতরে।
সাহানা
কাজল কানন
বর্ষায় ভেসে যাচ্ছে
সাহানার গর্ভমাস
শরীরের তোহম
গড়িয়ে নামছে
মনিরামপুর খালে
তাকায় না সাহানা
খবরও রাখে না
কত গর্ভ এলো-গেলো।
শত পিতৃপাথর
ঘষে গেলে দেহে
মৃদু বেদনা হয়
সেই বেদনাও মুখ্য নয়
টাকার রঙিলা মন্থনে
তাতেই কামড় বসেছে
কোভিড বর্ষণে
সাহানা এখন জলজা
ঘষায় ঘষায় খোসাওঠা বর্ষা
সংক্রমণ
সোনালি বেগম
চেতনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে
জীবনদর্শন। ট্রামে বাসে নানান
মানুষের সঙ্গে দূরত্ব, উত্তাল জোয়ার
ভেসে যাচ্ছে। গোষ্ঠী সংক্রমণ
শুরু হয়ে গেছে। শীত-গ্রীষ্ম শেষে
বর্ষা এসে গেল। প্রতীক্ষার ব্রত
শিখে ভ্যাক্সিন সন্ধানে আকুল
মানব-শৃঙ্খল। হাহাকার করোনাকালে
উদগ্রীব রঙিন স্বপ্নের দেশ। জড়িয়ে
যাচ্ছে জীবন-স্পন্দন ঘনঘোর বর্ষায়...
সব সর্বনাশে কাঁদতে নেই
আদিত্য নজরুল
পুরো বাংলাদেশ আজ
কাজলপরা নারী কান্নামগ্ন মায়াবী চোখ
ছিঁড়ে গেছে বুঝি রাতদিন
দাদুর সুঁই-এর ক্ষীপ্রতায়
টোক দিতে দিতে অবিরাম পড়ছে যে বৃষ্টিফোঁটা,
চারদিকে তাকালেই মনে হয়
জলের রাজ্য জলেরই সন্ত্রাস
মৃত সব্জি ও শস্যক্ষেত জুড়ে
হত্যাকারীর মতো
উল্লাস করছে থই থই জল
বৃষ্টির ফোঁটা মানুষের মনে জাগিয়ে দিয়েছে
স¤্রাটের চাবুকের ভয়
যাচ্ছে না কেউ ঘরের বাইরে,
বর্ষা তোমার কাছে সবিনয়ে জানতে চাই
‘মানুষ তোমাকে সমীহ করে
যাচ্ছে না ঘরের বাইরে
সেখানে নিশাচর প্রেতের উল্লাসে কেমন করে হাঁটছে করোনা?’
শ্রাবণে, আমাদের প্রেমগুলো
মনিরুল মোমেন
হকারের ডাকের মতো বর্ষা আসে আনবিক ভোরে।
প্রিয় কবিদের কিছু বই, দু-চার জোড়া পাতা,
বিমলা সাহার বোনা খয়েরি নকশিকাঁথা
কেমন জমে থাকে পাললিক সম্পর্কের খেয়াঘাটে।
ভেজা গন্ধে মৌ মৌ করে সময়
ক্লান্ত মল্লারের চোখে দীর্ঘশ্বাসের মতো বড় হতে থাকে
শ্রাবণের দৃশ্যাবলি।
কত শত শিশুমানুষ হা করে বসে থাকে
জলের নোঙর গেড়ে। যাপিত সম্পর্কেরা
আমোদিত হয় ফসলি জমির উর্বরে!
প্রতি ভোরে, ভোরবেলাগুলো ভিজে চলে নিরন্তর।
মেঘের শব্দের মতো বেড়ে ওঠা কামকাল
হিসেবের গড়মিল করে ডাগর চোখে তাকায়,
একফোঁটা জলের নেশায় কেমন জাদুবিদ্যার মতো
জিহ্বা নাড়ায় ঘুমভাঙা প্রেমিকেরা।
শ্রাবণের জলে আমাদের প্রেমগুলো
ম্যাজিক বলের মতো স্ফিত হতে থাকে।
শেষ ভালো যার
শেলী সেনগুপ্তা
মিছিলের উদ্যমে ঝরছে বৃষ্টি
প্রতিবাদ মুখর স্লোগানে
বঞ্চিতের হুংকার,
দীর্ঘশ্বাসে
কাঁপছে শহর,
বিধবার থান ভোরে কালির আঁচড়,
মুখরা রমণীর ঝগড়ায় যেন
বিদীর্ণ পাড়া,
শিস বাজানো বখাটে যুবকও
থমকে গেছে
জল কোলে হেঁটে যাওয়া শহর দেখে,
কর্মহীন মানুষের ক্ষুধা এখন নূহের নৌকা!
তবে কি আসছে কেউ
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো
শহরের কষ্টগুলো তাড়িয়ে নিতে?
দেওয়ারে বেয়াই বলে ডাকি
মাহফুজ রিপন
অলকে পলকে মেঘের ডমরু
ভিজে গেলো উঠোনের ধান।
আষাঢ় শ্রাবণ ভরা-ভাদর জুড়ে
বেয়াই-বেয়াই খেলা ইলশে ঘ্রাণ
ঝিরি ঝিরি মশকরা তোমার
তাকালেই শেয়ালের বিয়ে।
গতবার তুমি আসো নাই
অভিমানী বেয়াই আমার
ধান, দূর্বার কসম দিলাম
শোন মেঘারাণীর কান্দন!
মিত্রাক্ষর শ্রাবণ
রঞ্জনা বিশ্বাস
দ্বিবীজপত্রীর ঘুমের ভিতর কে বাস করে?
যে বাস করে তার জন্য কিসের অপেক্ষা?
ছিলাম তোমার যুগ্মআকাশ। অথচ-
বৃষ্টি তোমাকেই চিনে নিয়েছে।
এখন জেগে ওঠার সময়
তোমার চোখের পাতায় কদমের গান
আমার চুলে উড়ে যাওয়া বাতাস
হৃদয়ে জলের দাগ।
কে বাজায় শূন্য বাঁশি বৃষ্টির দ্বিগুণ?
আহ্ বৃষ্টি! ঝরঝর বৃষ্টি
দ্বিবীজপত্রীর ঘুমের ভেতর তোমার ধ্যান
মিত্রাক্ষর শ্রাবণ
ভালোবাসার জমজ সোহাগ।
কদম, কোভিড
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
তুমি চেয়েছ কবিতা
আর
আমি?
...
বৃষ্টি!
চেয়ে দেখি-
কদমফুলের মতো কোভিড-উনিশে
ছেয়ে গেছে চারপাশ!
প্রবল ঘৃণায় আক্রান্ত করে চলেছে
বিশ্রি জ্বর আর শ্বাসরুদ্ধকর শ্বাসকষ্ট
বাড়িয়েছে মৃতমুখের সারিবদ্ধ সারি!
বৃষ্টি হয়ে এসো,
ভাসিয়ে নিয়ে যাও-
করোনা-কোভিড
অমঙ্গল, অকল্যাণ
আশঙ্কা, ভয় আর হিংস্রতার বিস্তার!
আঁকতে চাই জলের রঙে
লিখতে চাই প্রেমের কবিতা।
ভালোবাসায় ভিজে ভিজে
কামনার সুখকর উত্তাপ চাই
দ্রুততম শ্বাস চাই উত্তেজনার!
বৃষ্টি হয়ে না এলে কি সম্ভব
বৃষ্টির কবিতা লেখা?
প্রেম হয়ে না এলে কি সম্ভব
কোভিডের মরণ দেখা?
আমাদের কাক হয়ে ওঠার গল্প
সুমন শামস
রামগিরির বর্ষায় কালিদাস কবি হয়ে উঠলেও
নাগরিক মেঘে আমরা হয়ে যাই হরবোলা কাক।
কেননা যক্ষদের পাড়ায় কাব্য করতে গেলে
একদা বর্ষায় দু’হাতে পালক এলো
সবেগে ওদের ছুঁড়ে দেয়া ব্রহ্মাস্ত্রগুলো
আমাদের উড়িয়ে নিতেই
আমরা পরিণত কাক হয়ে উঠলাম
বিরুদ্ধ বৃষ্টিতে!
আর আমাদের পেছন পেছন ছুটতে লাগলো
কতগুলো ন্যাংটো বালকের দল...
ওদের হাতেও ছিলো কাঁকর শ্রাবণ!
এখনো বর্ষা এলেই
আমাদের কাক হয়ে ওঠার গল্পটা মনে পড়ে।
সাইবার যক্ষপুরীতে এভাবেই
কবিরা বর্ষার কাক হয়ে যায়।
বর্ষা মঙ্গলকাব্য
চাঁদনী মাহরুবা
আপাতত সব মুখস্থ সৌজন্যতা দুহাতে সরিয়ে রাখা যাক। এমন স্ববিরোধী খই ভাজতে গেলে মগজের কোষে অসংখ্য মথ এসে জড়ো হতে থাকে। যেন শীতকালীন সন্ধ্যায় ল্যাম্পোস্ট জ্বলে ওঠার সাথে সাথে রাজ্যের পোকারা পিকেটিঙে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। এর থেকে থিতু হওয়া যাক। কুয়োর ভেতর বেঘোর ডুবে যাওয়া। হাওয়া সভ্যতা, সবুজ মাচানে বেগুনি শিমফুল... ভাবতে ভাবতে ভাববার বিষয়বস্তু। ভুলে যাওয়া ভালো তবে। শেষতক, মানুষ উত্তরাধিকার-সূত্রে কিছু নিষিদ্ধ আখ্যানশাস্ত্রের জনক।
টানেলের শেষ প্রান্তে এসে- আবার উল্টো দৌড়াবার মতন, কামিজের ঘাটে দু-চারটা গল্প লিখবার মতন গুঁড়ো গুঁড়ো রসায়ন জমাট বাঁধতে কোন ধনতান্ত্রিক নিয়ম মানে না। দ্যাখে না- মাসকাবারি হাতের ফাঁকে উঠানের শেষ দাগ- ক্রমাগত রক্তের ভেতর বুনে চলে ড্রাগনমুখো ইচ্ছেসমষ্টি।
বর্ষা, ঋতুর দ্বিতীয় মেয়ে
মাহফুজা অনন্যা
সমুদ্রফেনাচিত্রিত চোখের মণি যার, ‘বর্ষা’ ঋতুর দ্বিতীয় মেয়ে
ধূসর মেঘের ঝাঁকে কখনো সে আকাশের পাশে বসে, অভিমান করে, কাঁদে
যে বরবাদ করে দিতে পারে সমুদ্র দেখার কৌতূহল
সমতলে শোনাতে পারে সমুদ্র-কল্লোল, বনভূমির সোঁদাঘ্রাণ।
বর্ষা, যার চুম্বন বরফেরও অধিক শীতল-ম্রয়িমাণ
যে ডোবাতে পারে, ভাসাতেও পারে বন্দরে-বন্দরে,
সৌভাগ্যের জাহাজে ছিনতাই করে নিয়ে যেতে পারে গাঙচিল ওড়া বাতাস
চিরপরিচিত স্বপ্নের লালমাটির দেশ যেখানে সে ও তার বোনেরা
আনন্দ ও ভোগান্তির দাঁড়িপাল্লায় ভারসাম্য রক্ষা করে চলে...
যাপনের চৌরাস্তায় জীবন টমটম যেমন রক্ষা করে চলে টাঙ্গাওয়ালা...
জলের চোখে জল
শ্রাবণী প্রামানিক
যতো ঝরাবে জল শ্রাবণের বাহানায়
পেটের আগুনে পুড়বে ততো মহোনায়
চিতা ছাড়াই শরীর পুড়ে হবে ছাই!
ডোবা শরীরে ভেসে থাকা মাথা
মদ্যিখানে মন আহারে রোমান্টিকতা
খোলা চুলের নীল আঁচলে সাপের খেলা!
চার দেয়ালে একচালা আকাশ
একমাঠ টইটুম্বুর দুধে ভেজা ভাত
জল ভরা পেটে আত্মার বন্ধ শ্বাস!
আরো যদি থাকে কিছু সাথে দিও
দূষিত মন, পুরানো কান্না, বিষ কথা
জলের আগুনে পুরিয়ে হয়তো ফিরবো!
বর্ষাসংক্রান্ত
রাখী সরদার
শ্রাবণকে ধারণার পূর্বেই
আমাদের বারান্দায় মুষলধারে অন্ধকার।
উড়ে আসা মেঘের গুহায়
ঝাঁক ঝাঁক বৃষ্টির গুজব, বৃক্ষপাড়া হতভম্ব
পথঘাট ওঁৎ পেতে... তাও কেউ ঝড়
চাখতে চাখতে হেঁটে যাচ্ছে রাতজাগা
প্রণয়াভিসারে। তার ছপাছপ পদচ্ছাপে ফোঁটা
ফোঁটা বৃষ্টির মন্ত্রণা। কান পাতলে মুষলধারে গান
অথচ, বর্ষায় প্রেম দাও বললেই
করতল ভরে ওঠে এক আঁজলা মৌনিজলে
বজ্রবৃষ্টি ফাঁদে এই বুঝি শ্রাবণ কুহক!
সজলঘন মেঘ ভিড় করেছে নলীনিবালার আটপৌরে চুড়িতে
উদয় শংকর দুর্জয়
মধুমঞ্জরি থেকে সরে যায় মেঘপাহাড়, জমা হয় স্কটিশ হিল্সের কোনো পাড়া গাঁয়। জল ছাপিয়ে ঝুমকো লতা ভেসে ওঠে শ্বেতকাঞ্চনের ডালে। অবসর লিখে একশ’ একর শিউলিরাঙা আকাশ কাত হয়; চুপ ঝরে গভীর গোপনে। আগন্তুক-রথ খুলে দিলে কপাট, অজস্র শুভ্রটগর নেমে পড়ে বেসামাল। তবুও ঘুংঘুর অরণ্যে মল্লিকাবতি সুতোয় গাঁথে মাধবী প্রহর; অগণতি সাঁকো ভিজবে বলে শতদল নেমে আসে পাহারায়, ঋতু বদলের। আপোলডোর গ্রামে এখন সিক্ত জাহাজের আনাগোনা, সজলঘন মেঘ ভিড় করেছে নলীনিবালার আটপৌরে চুড়িতে; ধুলো ঝরা শেফালিকার নাকছাবি-জংশনে দোলনচাপার আলো। জাহান সব পুরনো দেনা মিটিয়ে, কোনো বংশিবাদকের হাওয়াইয়ান গিটারে ভিজিয়েছে নীলাম্বরী বেলি। যে পথে জারুলমন থেমেছিল সচকিত চোখে, সে পথে রঙ্গনবালা ইচ্ছে করেই খসিয়েছিল নয়নতারা দুল। সে এই হিমহিম কামিনী ফোঁটা কুয়াশার পালে ছুটিয়েছে সাদা ঘোড়ার দল। তখন ফুলকাশ পথের শেষে, রাধাচূড়ার নামে উড়িয়েছে উত্তরীয়; তখন মঞ্জুলিকার পায়ে পদ্মামণির সেতারী চাল, এসব দেখে ভৈরবি দিঘি উপচে পড়ে ইলাং ইলাং ঘ্রাণে।
অঞ্জনা দত্ত
’৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়ে ওঠার কাহিনি বলার আগে ভাষা
আব্দুল মান্নান খান
কাটাচ্ছি করোনাকালের ঘরবন্দি জীবন। পার করাও বড় কঠিন হয়ে উঠছে দিন দিন।
ফারুক ইকবাল
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রয়াত হয়েছেন এ বছরের ১৪ মে। কালি ও কলম এই
ডোরিস লেসিংয়ের গল্প
অনুবাদ : কামরুল ইসলাম
সেবারের শীতের সময়টা প্রায় রাতেই সে অন্ধকারে সাড়ে চারটা! সাড়ে চারটা! বলে
বাদল বিহারী চক্রবর্তী
বিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা সাহিত্যে যে ক’জন যশস্বী ঔপন্যাসিক ছিলেন, তাঁদের
তুষার তালুকদার
প্রবন্ধের বিষয়টি গুরুগম্ভীর তবে আলেচনাতীত নয়। প্রথমেই মিথলজি প্রসঙ্গে বলি। তারপর যাদুবাস্তবতা।